Friday, August 16, 2013

১৯৭০ এর নিরবাচন

পাকিস্তানের রাজনৈতিক
পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয়
যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম
সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের
সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান
আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব
পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭
টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট
জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়,
যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার
প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয়
সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান
পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো
শেখ মুজিবের পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন।
তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই
প্রদেশের জন্যে থাকবে দু'জন
প্রধানমন্ত্রী। "এক ইউনিট কাঠামো"
নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের
মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন
করে ক্ষোভের সঞ্চার করে।
ভুট্টো এমনকি মুজিবের ৬-
দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ
করেন। মার্চের ৩ তারিখ পূর্ব ও পশ্চিম
অংশের এই দুই নেতা পাকিস্তানের
প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ভাগ্য
নির্ধারণে ঢাকায় বৈঠকে মিলিত হন।
তবে বৈঠক ফলপ্রসূ হয় না। মুজিব
সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন। ১৯৭১
সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ) এক ঐতিহাসিক
ভাষণ প্রদান করেন। এই
ভাষণে তিনি ২৫শে মার্চ জাতীয় পরিষদের
অধিবেশনের আগেই বাস্তবায়নের জন্য চার
দফা দাবি পেশ করেন:
১.অবিলম্বে মার্শাল ল' প্রত্যাহার
করতে হবে।
সামরিক
২.বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে।
নিহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা অনুসন্ধান
করতে হবে।
৩.২৫শে মার্চে জাতীয় পরিষদের
অধিবেশনের আগে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের
হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

শেখ মুজিব তাঁর ঐতিহাসিক
ভাষণে ঘোষণা করলেন, "এবারের সংগ্রাম
আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম
স্বাধীনতার সংগ্রাম"। তাঁর এই ভাষণ
গোটা জাতিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায়
উন্মাতাল করে তোলে।
শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ
১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ
নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের
অধিকার অর্জন করে, কিন্তু পাকিস্তানের
সামরিক সরকার ক্ষমতা কোন পূর্ব
পাকিস্তানের মানুষের
হাতে ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না। যদিও ৩
মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের
তারিখ নির্ধারিত হয়, কিন্তু
ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট
ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা
জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং সামরিক বাহিনীর
অফিসারদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের
নীলনকশা বোনা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১
মার্চ কোন কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের
নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়।
ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের
শেষ সীমা ছাড়িয়ে গেল এই সিদ্ধান্ত।
সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়।
ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে।
বঙ্গবন্ধু সারা দেশে ৫ দিনের হরতাল
এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার
আহবানে সারা পূর্ব পাকিস্তান কার্যত অচল
হয়ে যায়। সামরিক সরকার কারফিউ
জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের
চেষ্টা করে কিন্তু বুলেটের ভয়
দেখিয়ে বাঙ্গালিদের রাজপথ
থেকে সরানো যায় না। ৫ দিন হরতাল
শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু
তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।

★★★ভাষা আন্দোলন★★★

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের
পটভূমি অনুসন্ধান করে দেখা যায় ১৯৪৭
সালে পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই শুরু হয়
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম
পাকিস্তানের শোষণমূলক আচরণ। কেবল
অর্থনৈতিক শোষণ নয়, বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও
ঐতিহ্যের ওপরও নিপীড়ন শুরু হয় এবং এর
প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় যখন
পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ
ঢাকায় এসে ঘোষণা দেন "উর্দু
এবং কেবলমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের
রাষ্ট্রভাষা"। সাথে সাথে পূর্ব
পাকিস্তানের বাঙ্গালীরা এই ঘোষণার
বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ১৯৫২
সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্যে এই
আন্দোলন তীব্রতম রূপ ধারণ করে। এদিন
পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন সালাম, বরকত,
রফিক, জব্বার সহ আরো অনেকে।
পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে শেষ পর্যন্ত
১৯৫৬ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম
রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে হয়। আজ
পৃথিবীব্যাপী ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।

★★★বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ★★★

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১
সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের
সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ
একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর
মানচিত্র আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের
২৫শে মার্চ রাতের
অন্ধকারে পাকিস্তানী সামরিক
বাহিনী পূর্ব
পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে একটি জনযুদ্ধের
আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের
সূচনা ঘটে। [৯] পঁচিশে মার্চের
কালো রাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা
ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র,
শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ হত্যা করে।
গ্রেফতার করা হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ
নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত
দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙ্গালীর
তৎকালীন প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানকে । গ্রেফতারের
পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম
প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার
ঘোষণা দেন
পরিকল্গপিত গণহত্যার মুখে সারাদেশে শুরু
হয়ে যায় প্রতিরোধযুদ্ধ; জীবন
বাঁচাতে প্রায় ১ কোটি মানুষ
পার্শ্ববর্তী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে।
পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল
রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস
(ইপিআর), ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, সামরিক
বাহিনীর বাঙ্গালী সদস্য
এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের
স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ
দেশকে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর
কব্জা থেকে মুক্ত করতে কয়েক মাসের
মধ্যে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী ।
গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ
চালিয়ে মুক্তিবাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানী হানাদার
বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ
ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও
কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে। ডিসেম্বরের
শুরুর দিকে যখন পাকিস্তানী সামরিক
বাহিনীর পতন আনিবার্য হয়ে ওঠে, তখন
পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত
করতে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষণা করে। অত:পর ভারত বাংলাদেশের
স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়ে।
মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর
সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত
ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক
বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করে। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স
ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার
সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
এরই মাধ্যমে নয় মাস
ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয়;
প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙ্গালী জাতির প্রথম
স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

★★★বাংলাদেশ★★★

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার
একটি রাষ্ট্র যার আনুষ্ঠানিক নাম
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ । ১৯৪৭
খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক
শাসনাবসানে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত
হয়ে পাকিস্তান
নামে যে দেশটি সৃষ্টি হয়েছিলো, তার
পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তান শোষণ,
বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র
সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১
খ্রিস্টাব্দে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ
হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্যপীড়িত
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ঘটেছে দুর্ভিক্ষ ও
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ; এছাড়াও প্রলম্বিত
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও পুনঃপৌনিক
সামরিক অভ্যুত্থান এদেশের
অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ১৯৯১
খ্রিস্টাব্দে গণতান্ত্রিক
শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবার পর
থেকে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক
প্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর
তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম ।
কিন্তু আয়তনের হিসেবে বাংলাদেশ
বিশ্বে ৯৩তম; ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের
সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। তবে
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের তুলনায় বাংলাদেশের
মাথাপিছু জিডিপি (মূল্যস্ফীতি সমন্বয়কৃত)
প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, এবং ১৯৯০ -এর শুরুর
দিককার তুলনায় দারিদ্র্যহার প্রায় ২০
শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ
" পরবর্তী একাদশ " অর্থনীতিসমূহের
তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। রাজধানী
ঢাকা ও অন্যান্য শহরের পরিবর্ধন
বাংলাদেশের এই উন্নতির
চালিকাশক্তিরূপে কাজ করছে। এর
কেন্দ্রবিন্দুতে কাজ
করেছে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী মধ্যবিত্ত
শ্রেণীর ত্বরিৎ বিকাশ।
বাংলাদেশের বর্তমান
সীমারেখা নির্ধারিত হয় ১৯৪৭
খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগের সময়, নবগঠিত
দেশ পাকিস্তানের পূর্ব অংশ (পূর্ব
পাকিস্তান) হিসেবে। দেশটির উত্তর, পূর্ব
ও পশ্চিম সীমানায় ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব
সীমানায় মায়ানমার ; দক্ষিণে
বঙ্গোপসাগর। উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশ ও
ভারতীয় অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ
একত্রে একটি অবিচ্ছিন্ন বাংলাভাষী অঞ্চল
গঠন করে যার ঐতিহাসিক নাম “বঙ্গ”
বা “বাংলা”। এর পূর্বাংশ বা পূর্ব
বাংলা ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়
বাংলাদেশ নামীয় পৃথক একটি আধুনিক
জাতিরাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের উর্বর অববাহিকায়
অবস্থিত এই দেশটিতে প্রায় প্রতি বছর
মৌসুমী বন্যা হয়; আর ঘূর্ণিঝড়ও খুব সাধারণ
ঘটনা। নিম্ন আয়ের এই দেশটির প্রধান
সমস্যা পরিব্যাপ্ত দারিদ্র। তবে ২০০৫
খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংকের
দেশভিত্তিক তথ্য
অনুসারে দেশটি সাক্ষরতা বৃদ্ধি,
শিক্ষাক্ষেত্রে লৈঙ্গিক বৈষম্য দূরীকরণ
এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে উল্লেখযোগ্য
সাফল্য অর্জন করেছে। [৬]
তবে বাংলাদেশে এখনো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে যার
মধ্যে রয়েছে পরিব্যাপ্ত রাজনৈতিক ও
প্রশাসনিক দুর্নীতি, বিশ্বায়নের
প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের
উচ্চতা বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে তলিয়ে যাবার
শঙ্কা।
এদেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার
ব্যবস্থা প্রচলিত। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয়
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক ও
বিমসটেক -এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
এছাড়া দেশটি জাতিসংঘ , ডব্লিউটিও ,
ডব্লিউসিও , ওআইসি ও ডি-৮ -এর সদস্য।