পাকিস্তানের রাজনৈতিক
পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয়
যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম
সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের
সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান
আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব
পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭
টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট
জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়,
যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার
প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয়
সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান
পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো
শেখ মুজিবের পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন।
তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই
প্রদেশের জন্যে থাকবে দু'জন
প্রধানমন্ত্রী। "এক ইউনিট কাঠামো"
নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের
মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন
করে ক্ষোভের সঞ্চার করে।
ভুট্টো এমনকি মুজিবের ৬-
দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ
করেন। মার্চের ৩ তারিখ পূর্ব ও পশ্চিম
অংশের এই দুই নেতা পাকিস্তানের
প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ভাগ্য
নির্ধারণে ঢাকায় বৈঠকে মিলিত হন।
তবে বৈঠক ফলপ্রসূ হয় না। মুজিব
সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন। ১৯৭১
সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ) এক ঐতিহাসিক
ভাষণ প্রদান করেন। এই
ভাষণে তিনি ২৫শে মার্চ জাতীয় পরিষদের
অধিবেশনের আগেই বাস্তবায়নের জন্য চার
দফা দাবি পেশ করেন:
১.অবিলম্বে মার্শাল ল' প্রত্যাহার
করতে হবে।
সামরিক
২.বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে।
নিহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা অনুসন্ধান
করতে হবে।
৩.২৫শে মার্চে জাতীয় পরিষদের
অধিবেশনের আগে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের
হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
শেখ মুজিব তাঁর ঐতিহাসিক
ভাষণে ঘোষণা করলেন, "এবারের সংগ্রাম
আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম
স্বাধীনতার সংগ্রাম"। তাঁর এই ভাষণ
গোটা জাতিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায়
উন্মাতাল করে তোলে।
শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ
১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ
নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের
অধিকার অর্জন করে, কিন্তু পাকিস্তানের
সামরিক সরকার ক্ষমতা কোন পূর্ব
পাকিস্তানের মানুষের
হাতে ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না। যদিও ৩
মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের
তারিখ নির্ধারিত হয়, কিন্তু
ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট
ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা
জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং সামরিক বাহিনীর
অফিসারদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের
নীলনকশা বোনা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১
মার্চ কোন কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের
নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়।
ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের
শেষ সীমা ছাড়িয়ে গেল এই সিদ্ধান্ত।
সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়।
ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে।
বঙ্গবন্ধু সারা দেশে ৫ দিনের হরতাল
এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার
আহবানে সারা পূর্ব পাকিস্তান কার্যত অচল
হয়ে যায়। সামরিক সরকার কারফিউ
জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের
চেষ্টা করে কিন্তু বুলেটের ভয়
দেখিয়ে বাঙ্গালিদের রাজপথ
থেকে সরানো যায় না। ৫ দিন হরতাল
শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু
তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।